সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলি ‘বহুত্ববাদের বিরোধিতা’ করেছে বলে অভিযোগ তুলে, এই বিরোধিতাকে আদিবাসী জনগণের সঙ্গে প্রহসন হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সুজন চাকমা।
শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্থক প্রয়োগ’ প্রতিপাদ্যে নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকালে মহাজন পাড়া সূর্যশিখা ক্লাব থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের শাপলা চত্বর, আদালত সড়ক, কদমতলী ও নেন্সী বাজার ঘুরে খাগড়াপুরে গিয়ে শেষ হয়। পরে খাগড়াপুরের জেবিসি রেস্টুরেন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় আয়োজকরা জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে— আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঠিক ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্তি, মাতৃভাষায় পাঠদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কারাগারে অন্তরীণ নিরপরাধ বম সম্প্রদায়ের লোকদের নিঃশর্ত মুক্তি।
সমাবেশে সুজন চাকমা (ঝিমিট) বলেন, “বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্য দিয়েই আমরা আদিবাসী দিবস পালন করছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন ও ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পর্যটনের নামে ভূমি দখল হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, আমরা ভালো নেই। বাংলাদেশে আমরা বৈষম্যের শিকার।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরা আশা করেছিল নতুন বাংলাদেশে তাদের অধিকার স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দলই বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছে। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এনসিপিও-ও। অথচ বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা সভায় সকলের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। বহুত্ববাদের বিরোধিতা আসলে আদিবাসীদের সঙ্গে প্রহসন।”
উদযাপন কমিটির সদস্য জ্ঞান চাকমা বলেন, “২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠনের পর থেকে বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। কিন্তু ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। ২০২২ সালের ১৯ জুলাই তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে অফিস-আদালত, সংবাদমাধ্যমসহ কোথাও ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা এখনো কার্যকর।”
তিনি আরও জানান, “পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা জনপ্রিয় গ্রাফিতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ হামলা চালায়। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হলেও বিচার হয়নি।”
প্রধান বক্তা সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, “আদিবাসী ইস্যু কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশের নয়, এটি আন্তর্জাতিক বিষয়। অদূর ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে আমাদের দাবি থাকবে— আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি। না পেলে লাগাতার কর্মসূচি চালানো হবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আহ্বায়ক সাথোয়াই অং মারমা। বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক কর্মী কৃপায়ন ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের খাগড়াছড়ি সদর থানা সভাপতি আকাশ ত্রিপুরা এবং পানছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রত্না তঞ্চঙ্গ্যা।
এদিকে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আদিবাসী ফোরাম খাগড়াছড়ির আয়োজনে য়ংড বৌদ্ধ বিহার থেকে র্যালি বের হয়ে শাপলা চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি চাইথোয়াইং মারমা।
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.