১৮ আগস্ট, ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহ দিবস। ১৯৪৯ সালের এই দিনে ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ঘৃণ্য ‘নানকার’ প্রথা ও জমিদারি বিলুপ্তির দাবিতে সিলেটের বিয়ানীবাজারের সানেস্বর উলিুউরী অঞ্চলে কৃষকদের আন্দোলনে পুলিশ ও জমিদারের পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন কৃষক নিহত হন। শহীদরা হলেন—ব্রজনাথ দাস (৫০), কটুমনি দাস (৪৭), প্রসন্ন কুমার দাস (৫০), পবিত্র কুমার দাস (৪৫) ও অমূল্য কুমার দাস (১৭)। এর আগে জমিদারের লাঠিয়ালদের হাতে নিহত হয়েছিলেন রজনী দাস। এ নিয়ে নানকার আন্দোলনের শহীদের সংখ্যা ৬ জন। এরপর প্রবল জনআন্দোলনের মুখে ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত ও নানকার প্রথা রদ করে। কৃষকদের জমির মালিকানা স্বীকৃতি দিতে সরকার বাধ্য হয়। প্রতি বছর এই দিনে বিয়ানীবাজারে নানকার দিবস পালিত হয়ে আসছে অধিকার আদায়ের চেতনার প্রতীক হিসেবে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিয়ানীবাজারে সানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে নানকার কৃষক বিদ্রোহের স্মৃতিসৌধে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানকার বিদ্রোহ দিবস পালন করবে বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ড ও সানেশ্বর-উলুউরি গ্রামবাসী। এদিন সকাল ১০টায় সমবেতভাবে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে নানকার আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। নানকার প্রথা ছিল সামন্তবাদী শোষণের এক নিকৃষ্ট রূপ। নানকার প্রজারা জমিদারের দেওয়া বাড়ি ও সামান্য কৃষিজমি ব্যবহার করলেও মালিকানা ছিল জমিদারের হাতে। বিনা মজুরিতে বেগার খাটতে হতো এবং সামান্য কারণে চলত অমানুষিক নির্যাতন। নারীরাও ছিলেন জমিদারের ভোগের পণ্য। ১৯২২ সাল থেকে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নানকার প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু হয়। ১৯৩৭ সালে করিমগঞ্জের বিয়ানীবাজারে অনুষ্ঠিত সুরমা উপত্যকার প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলনে প্রথম প্রথা বিলুপ্তির দাবি ওঠে। এরপর রফিনগর, ভাদেশ্বর, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ভোরে সানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামে পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায়। লাঠিসোটা হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ইপিআরের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে কৃষকরা টিকতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পাঁচজন। আহত ও গ্রেফতার হন অনেকেই, যাদের মধ্যে ছিলেন আন্দোলনের নেত্রী অপর্ণা পাল, সুষমা দে, অসিতা পাল ও সুরত পাল। এরপর প্রবল জনআন্দোলনের মুখে ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত ও নানকার প্রথা রদ করে। কৃষকদের জমির মালিকানা স্বীকৃতি দিতে সরকার বাধ্য হয়।
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.