সারা বিশ্ব

বুকেলের আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫ ২০:২৭

এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে এখন থেকে প্রায় অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন—সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে এমন ব্যবস্থাই করে ফেলেছে তাঁর সরকার। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তভাবে ক্ষমতায় থাকার পথ খুলে গেল, আর এরপরেও তাঁর ক্ষমতায় থাকা এখন আর খুব একটা অসম্ভব নয়।

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়া বুকেলের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি করার সংকেত মেলে শুরু থেকেই—প্রথম বছরেই সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ, বিচার বিভাগে অনুগতদের বসানো এবং সংবিধানের ব্যাখ্যা বদলে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন—সবই ছিল তার পরিকল্পনার অংশ।

শেষ পদক্ষেপটি এলো ৩১ জুলাই। সেই দিন, ক্ষমতাসীন নিউ আইডিয়াস পার্টির এক অপ্রচলিত আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্টের পুনর্নির্বাচনের মেয়াদ অনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব পেশ করেন। কোনো কমিটি বা বিতর্ক ছাড়াই মাত্র তিন ঘণ্টায় সেটি আইনে পরিণত হয়। ৬০ সদস্যের পার্লামেন্টে ৫৭ জনের সমর্থনে এটি পাস হয়, বিরোধিতা করেন মাত্র তিনজন।

পার্লামেন্টের সভাপতি এরনেস্তো ক্যাস্ত্রো এই সিদ্ধান্তকে “গণতন্ত্রের বিজয়” হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “জনগণই ঠিক করবে কে কতদিন শাসন করবে।” কিন্তু বিরোধী আইনপ্রণেতা মারসেলা ভিয়াতোরোর মতে, “এ দিনটিতে এল সালভাদরে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে।”

নতুন আইনে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে রান-অফ নির্বাচন, এবং পরবর্তী নির্বাচনও এগিয়ে এনে ২০২৭ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে—যাতে বিরোধীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ না থাকে।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ১৯৯২ সালের শান্তি চুক্তির পরও এল সালভাদরে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বরাবরই কম। গ্যাং-সংস্কৃতির বিস্তার সে বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে আরও বেশি।

গ্যাং নির্মূলে কঠোর অবস্থানের কারণে বুকেলে জনসমর্থন পেলেও, তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ।

বুকেলের এই ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখনো পর্যন্ত ওয়াশিংটন থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য আসেনি। অথচ, চলতি বছরের মার্চে এক চুক্তিতে ২৩৮ জন ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে এল সালভাদরের কারাগারে রাখার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন বুকেলে। ট্রাম্পও তাকে “অসাধারণ প্রেসিডেন্ট” হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত জিনা রোমেরো একে সরাসরি স্বৈরতন্ত্র আখ্যা দিয়ে বলেন, “যদি আদালত, পার্লামেন্ট, গণমাধ্যম ও বয়ান সবকিছুর ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ স্বৈরাচার না হয়, তাহলে স্বৈরাচার কাকে বলে আমি জানি না।”

তবে এসব নিয়ে দেশটির সাধারণ জনগণের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। বরং সামনে আসা সরকারি ছুটি নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত ভ্রমণের পরিকল্পনায়।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

সারা বিশ্ব থেকে আরো পড়ুন