অভিমত

রেমিট্যান্সে রেকর্ড : এনআইডির অজুহাতে ইউরোপ প্রবাসীদের পাসপোর্ট সংকট

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:২৬

আহমেদ সোহেল (বাপ্পি) :

বাংলাদেশ আজ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে টিকে আছে। তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। অথচ এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই আজ সবচেয়ে অবহেলিত, অসহায়। ইউরোপের হাজারো প্রবাসী বছরের পর বছর ধরে পাসপোর্ট নবায়ন বা সংশোধনের জন্য দূতাবাসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এর মধ্যে বহুজনের  দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় ধরে আটকে আছে পাসপোর্ট আবেদন, কারণ একটাই—জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকা।

দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের প্রথম আশ্রয়স্থল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা যেন এক অদৃশ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকে বলা হচ্ছে—“এনআইডি না থাকলে কিছুই করা যাবে না।” অথচ এই মানুষগুলোই বিদেশের মাটিতে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করছেন। তাদের প্রতি এই অবহেলা কেবল অন্যায় নয়, অমানবিকতাও।

সরকারেরও এখানে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এনআইডি যে দেশে তৈরি হয়, সেটা সবাই জানে। কিন্তু যারা বহু বছর আগে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, যাদের জন্ম নিবন্ধনও হয়নি, তারা কীভাবে এনআইডি সংগ্রহ করবেন? বিদেশে থাকা প্রবাসীদের জন্য অনলাইন বা দূতাবাসভিত্তিক এনআইডি নিবন্ধন ব্যবস্থা করা সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব ছিল। অথচ বছর ঘুরে যাচ্ছে, সমস্যার সমাধান নেই।
এই অনিশ্চয়তার কারণে অনেক প্রবাসী এখন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কাজ করতে পারছেন না, ব্যাংক হিসাব বন্ধ হচ্ছে, কেউ দেশে ফিরতেও পারছেন না। পরিবারের ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে প্রশাসনিক জটিলতার ফাঁদে। তাদের চোখে ভর করে কেবল একটাই প্রশ্ন—রাষ্ট্র কি তাদের কথা ভুলে গেছে?

প্রবাসীরা কোনো বোঝা নয়, তারা দেশের সম্পদ। তাদের কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করা মানে সেই সম্পদকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া। সরকারের এখনই উচিত ইউরোপের প্রবাসীদের  আটকে থাকা পাসপোর্টগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নবায়ন করার ব্যবস্থা করা এবং এনআইডি নিবন্ধন উদ্যোগ নেওয়া এবং দূতাবাসগুলোকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে বাধ্য করা।
এই মানুষগুলোই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু মানবিক নয়—এটা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক : ফ্রান্সপ্রবাসী বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী। 

অভিমত থেকে আরো পড়ুন