ইউরোপ

ইতালির রোমে প্রথমবারের মতো বাঙলা কবিতা উৎসব

অংশ নিলেন দুই বাংলা, ইতালি ও ফ্রান্সের কবি-আবৃত্তিকার

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৬

আবু বকর আল আমিন :

বাংলা সংস্কৃতির  ইতিহাসে যোগ হলো আরও একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।  ইউরোপের হৃদয়ে, চিরন্তন নগরী রোমে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলা কবিতা উৎসব।
ইতালির রাজধানী রোমের 'কাসা দেল্লা কুল্তুরা'-র' আঙ্গিনায় গত ২২ নভেম্বর বিকেলে মিশে গিয়েছিল বাংলা ও ইতালিয়ান সুরের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। 'মুনিছিপিও কুইন্তো' বা পঞ্চম নগরপালিকায়, 'তোরপিঞাত্তারা' এলাকার 'পার্ক' 'দে' সানকতিস উদ্যানে বাংলা কবিতার প্রথম এই মহোৎসবের আয়োজন করেন যৌথভাবে  'শান্তালিয়া কালচার অ্যান্ড ট্র্যাভেল', 'স্তেফানো' রোমানো ও জিয়াউর রহমান।

এই ঐতিহাসিক সন্ধ্যায় কাব্যমঞ্চে অংশ নেন ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কবি ও আবৃত্তিশিল্পীরা। আর  ফ্রান্স থেকেও যোগ দেন একদল কবি ও আবৃত্তিকার। তাদের কণ্ঠে বাংলা কবিতার আবৃত্তি আর  ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়ে যেন পেয়েছে নতুন প্রাণ।

স্থানীয় রোমান ও বাংলাভাষী প্রবাসী দর্শকদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যাটি হয়ে উঠেছিল এক আন্তঃসাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন।

অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন জিয়াউর রহমান,  স্তেফানো রোমানো এবং শান্তালিয়ার পক্ষ থেকে এনরিকে দি বেনেদেত্তো ও ভিতা কামারদা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে, প্রফেসর মারিও প্রায়ের বাংলা সাহিত্য, কবিতা এবং অনুবাদের গুরুত্বের উপর একটি বক্তব্য রাখেন।

তারপর দলীয় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে রোমের সাংস্কৃতিক স্কুল 'সঞ্চারী সঙ্গীতায়ন।
পরিচালক শুশমিতা সুলতানা ও তার দল পরিবেশিত  সঙ্গীতের মূর্ছনায় ভরিয়ে তোলেন সন্ধ্যাটি। চিরচেনা প্রিয় সুরে কন্ঠ মেলান উপস্থিত বাঙালি দর্শকরাও। 

এরপর প্যারিসের আমন্ত্রিত  শিল্পীদের পক্ষ থেকে আয়োজকদের ধন্যবাদজ্ঞ্যাপন করেন সংস্কৃতিজন হাসনাত জাহান।
তিনি বলেন,এর আগে একসাথে এতোগুলো বাংলা কবিতার ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ ও উপস্থাপন একসাথে  কখনোই হয়নি,এটি বাংলা সাহিত্যের জগতে  একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে ভবিষ্যতে। 

তারপর একে একে মঞ্চে আবৃত্তি উপস্থাপন করেন প্যারিসের কবি মেরি হাওলাদার, আবু বকর আল আমিন,  সোয়েব মোজাম্মেল।
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কিংবা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আজও আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই-সহ সবগুলো বাংলা কবিতার ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ, কবি ও আবৃত্তিকার পরিচিতি উপস্থাপন করেন ভাষা গবেষক জিয়াউর রহমান হৃদয়। 

এদিকে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আগত অমৃতা চৌধুরী এবং রোম থেকে প্রফেসর নিমান সোবহান, প্রফেসর সানজুক্তা দাসগুপ্তাসহ সকল শিল্পীরাই বাংলা ও ইতালিয়ান ভাষায় উপহার দেন তাদের অনবদ্য শিল্পনৈপুণ্য।

ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত কবিতা  "Demain, dès l'aube" (আগামীকাল, ভোরে) ফরাসি থেকে বাংলায় অনুবাদ  করেন হাসনাত জাহান। তিনি এই কবিতাটি ফরাসি ভাষায় পড়েন। ইতালিয়ান ভাষায় পাঠ করেন জিয়াউর রহমান ও বাংলা অনুবাদ আবু বকর আল আমিন।

রোমে কবিতা সন্ধ্যার আয়োজক, ভাষা গবেষক  জিয়াউর রহমান বলেন,ইতালির রোমে বিপুল সংখ্যক বাঙালিদের বসবাস। তাদের আয়োজনে পহেলা বৈশাখ, কনসার্ট  বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়,কিন্তু শুধু বাংলা কবিতা নিয়ে এর আগে রোমে কোন কাজ হয়নি। ইতালিয়ান ভাষাভাষীদের অন্যতম আগ্রহের বিষয় বাংলা কবিতা,আমরা সেই জায়গাটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি বলেও মন্তব্য করেন জিয়াউর রহমান ।

এই উৎসব শুধু যেন কবিতার ছিলোনা বরং ছিল বাংলা সংস্কৃতিকে ইউরোপের মাটিতে পরিবেশন ও প্রচারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আয়োজকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা,  দূরদর্শিতায় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এই আয়োজন সফলতার মুখ দেখে বলে জানান অন্যতম আয়োজক প্রতিষ্ঠান শান্তালিয়া কালচার এন্ড ট্রাভেল এর পরিচালক প্রসূণ মন্ডল।

রোমের সেই সন্ধ্যা প্রমাণ করল, ভাষার কোন ভৌগোলিক বাধা নেই। কবিতার সুর, শব্দ আর আবেগ যে কোনো সীমানা অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারে মানুষের হৃদয়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রোমে এমন আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায় ইতালিতে অবস্থানরত বাঙালি ও ইতালিয়ান ভাষাভাষী অনেককেও।

বাংলা কবিতাকে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ও নানা জাতিসত্তার মানুষের সামনে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে জানান দেয়া এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন, ইউরোপে এমন আয়োজনের অন্যতম এই  পরিকল্পনাকারী
ঈষাণ দেওয়ান।

তবে ইতালির রোমে বিশাল সংখ্যার বাঙলাদেশী জনগোষ্ঠী থাকলেও, এমন সৃজনশীল আয়োজনে তাদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম বলে মন্তব্য করেছেন আয়োজক স্তেফানো রোমানো। 

আগামীতে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় আগ্রহ ও উপস্থিতি বাড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান আয়োজকরা।

ইউরোপ থেকে আরো পড়ুন