ফ্রান্সে রায় ঘিরে তীব্র বিতর্ক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৪৫
মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান :
একজন মানুষের নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ হয়েছে শুধু এই কারণে যে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন এক অনিয়মিত অভিবাসীকে। ঘটনাটি এখন ফ্রান্সে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে—মানবিক সহানুভূতি কি এখন অপরাধের পর্যায়ে পড়ছে?
ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি, যখন এক আবেদনকারীকে ফরাসি কর্তৃপক্ষ তার ‘আইনবহির্ভূত কাজ’-এর কারণে জাতীয়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেই কাজটি ছিল, ঘরহীন এক অনিয়মিত অভিবাসীকে কয়েক মাসের জন্য আশ্রয় দেওয়া। ফ্রান্সের নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ ও ‘অসংগত’ বলে সমালোচনা করেছে। তাদের প্রশ্ন, “একজন মানুষ যদি সহানুভূতির জায়গা থেকে কাউকে আশ্রয় দেয়, তাহলে সেটা অপরাধ হতে পারে কীভাবে?”
অর্থনীতির অদৃশ্য শ্রমিকেরা : ফ্রান্সে বর্তমানে লক্ষাধিক অনিয়মিত অভিবাসী বসবাস করছে—যাদের অনেকেই লুকিয়ে কাজ করেন নির্মাণ, কৃষি, হোটেল বা পরিচ্ছন্নতা খাতে। অর্থনীতির এই অদৃশ্য শ্রমিকরাই বাস্তবে দেশের শ্রমবাজারের ভার বহন করছে। অথচ, তাদের কাগজ নেই বলেই, বেশিরভাগ সময় তাদের মজুরির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত গোপনে কেটে নেয় নিয়োগদাতারা। এক শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি বলেন, “এই মানুষগুলো ফ্রান্সের চাকা ঘোরায়, কিন্তু তাদের অধিকার নেই। আর যারা মানবিক কারণে সাহায্যের হাত বাড়ায়, তারাই এখন অভিযুক্ত।”
মানবিকতা বনাম আইন : ফরাসি আইনে অনিয়মিত অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়া সীমিত পরিসরে বৈধ, তবে ‘নিবাস বা আশ্রয়’ দেওয়াকে অনেক সময় আইনের চোখে ‘সহযোগিতা’ হিসেবে দেখা হয়। এখানেই তৈরি হয় দ্বন্দ্ব—মানবিকতা বনাম প্রশাসনিক বিধান।
এই ঘটনার পর ফ্রান্সে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ লিখেছেন, “মানুষ হওয়াটাই এখন অপরাধ।” কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, “আইন যদি মানবতাকে দমন করে, তবে সেই আইন কাদের জন্য?”
বিশ্লেষণ : ফ্রান্স বহুদিন ধরে মানবাধিকারের দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই রায় সেই ভাবমূর্তিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন এখন একটাই—মানবিকতা যদি অপরাধ হয়, তাহলে সভ্যতার সংজ্ঞা কোথায় দাঁড়ায়?
।। লেখক- সাংবাদিক। সূত্র : অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্ম।
অভিমত থেকে আরো পড়ুন